বটতলা প্রযোজনা - ২৫
যোজনগন্ধা মায়া
নাট্যকার: বদরুজ্জামান আলমগীর
নির্দেশক: বটতলা
সার-সংক্ষেপ
যোজনগন্ধা মায়ার পটভূমি বাংলাদেশের আর পাঁচটা সাধারণ গ্রামের মতোই একটা গ্রাম, লতিপুতি গ্রাম। গ্রামের মানুষের জীবনের একটা বড় জায়গাজুড়ে আছে কুমিরপীরের মাজার। এ নাটকে কুমিরপীরের আধ্যাত্মিকতা জাগতিক, তিনি কৃষকের ভাতের অধিকারের কথা বলেন, তাদেরকে নিজের অধিকার বুঝে নিতে শেখান। মানুষকে চোখের ঠুলি খুলে দেখতে শেখানোর অপরাধে পীরেরও জান যায়; তবে মৃত্যুতেই যেন তিনি আরও বেশি করে মানুষের সাহসের খুঁটি হয়ে উঠতে থাকেন। পীরের রেখে যাওয়া চাপা বিপ্লব তার শিষ্যদের থেকে ছড়িয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে। কুরুমণি কুমিরপীরের মাজার ঘিরে সর্বপ্রাণের জমিনের অধিকার রক্ষার আরেক লড়াই চালিয়ে যায়; গ্রামের মানুষের কাছে পীরের বাণীর বাহক হয়ে ওঠে সে।
কুরুমণির মতো কত নাম না জানা বিপ্লবী মুখ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মিলে যায় ইলা মিত্র কিংবা প্রীতিলতার মুখে, যারা সংগ্রাম সম্মুখ সারি থেকে করে এসেছে।
প্রজন্মের ব্যবধানে সেই কুরুমণি যখন তার সন্তান জহরকে সময়ের প্রয়োজনে যুদ্ধে সামিল হতে পাঠায় তখন থেকে আজ অবধি কুরুমণি বেঁচে আছে – ছানি পড়া মলিন মুখ, অপেক্ষার প্রহরে। বয়সের ভারে নুব্জ হয়ে কুরুমণি আর অপেক্ষারত জনপদ জহরের মুখ কল্পনা করে খুজে নেয় আলফ্রেড পাহানকে, যে হঠাৎ এক সকালে পীরের বিলের পাড়ে এসে নামে এবং সারা গাঁয়ে হুলুস্থুল ফেলে দেয়। অধিকার ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় জহরের প্রতীক হয়ে গ্রামে আসে যে পাহান, তাকে আঁকড়ে ধরতে চায় সবাই; কুরুমণি, কাজলবানু বা দাইনশা মিয়া। তবে পাহান, জহর আর মহিষেরা লড়াই জয় করে কখনো ফিরতে পারে না। হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে একবার দেখার মায়া-তৃষা কুরুমণি বয়ে নিয়ে চলেন। মানুষের আয়ুর শেষ আছে কিন্তু অপেক্ষার শেষ নাই যে। জহরের জন্য যেমন তার মা কুরুমনি অপেক্ষা করে তেমনি অপেক্ষা করে এই জনপদের মানুষ, মুক্তির আশায়। অথচ সত্যিকারের মুক্তি আজো অধরা। প্রতিটি সংগ্রামের শেষে যে নতুন স্বপ্ন নিয়ে একটা জনপদের মানুষ আশাজাগানিয়া গান গায়, আদতে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।
নাটকটির ঘটনাপ্রবাহ মুক্তিযুদ্ধ, শূন্য দশক আর তার ১২০ বছর অতীতের মধ্যে অনায়াসে যাতায়াত করে, কথোপকথন চালায়। নাটকটি নির্দিষ্ট কোনো সময়ের গল্প নয়, এটি আবহমানকালের গল্প। বাঘ আর মহিষের যে লড়াই অনন্তকাল ধরে চলে আসছে আর পরিবর্তনের যে আশা মানুষের মনে সহস্রকাল ধরে জাগরূক, তারই এক ট্র্যাজিক মঞ্চরূপ যোজনগন্ধা মায়া।
You may also like the following events from BotTala- a performance space: