মহান ২৬ আশ্বিন ১১ অক্টোবর
#বিশ্বঅলি_শাহানশাহ্_হযরত_সৈয়দ_জিয়াউল_হক_মাইজভাণ্ডারী (কঃ) কেবলা কাবার পবিত্র ওরশ শরীফ :
❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️
ভাব বিভোরতা বাড়তেই থাকে। আত্মীয়-স্বজন পিতামাতাকে পরামর্শ দিলেন,বিয়ে হলে হয়তো ছেলে সংসারমুখী হয়ে উঠবে, কমে যাবে ভাব-বিভোরতা। বিবাহের উপযুক্ত বয়স; তাই বিয়ে করানোও প্রয়োজন।
পিতা চিন্তা করলেন, এমন ছেলেকে কে আবার মেয়ে দেবে! তবু খোঁজ খবর নেওয়া হলো। ফটিকছড়ি থানার দাঁতমারা ইউনিয়নের প্রখ্যাত জমিদার জনাব বদরুজ্জামান সিকদার সাহেবের কনিষ্ঠা কন্যা মোছাম্মৎ মনোয়ারা বেগম সম্পর্কে আলোচনা হয়।
এক বৎসর পূর্বে সিকদার সাহেব এক খানা চিঠি পেয়েছিলেন। চিঠিতে লেখা ছিল, তাঁর একটা মেয়ে মাইজভান্ডার শরীফ বিয়ে দিলে হাশরের দিনে রাসুলুল্লাহ (দ:) তাঁর মুক্তির সুপারিশ করবেন।
কার্ত্তিক মাসের পনেরো তারিখ রোববার শুভ অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারিত হয়। এ আত্মীয়ের ব্যাপারে বরও সম্মত ছিলেন। সিকদার সাহেব হযরত দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারীর মুরিদ ছিলেন। হযরতের ওরশ শরীফে তিনি ব্যবস্থাপনার দ্বায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
মেয়ের বিয়ের প্রস্তাবে তিনি ভীষণ ভয় পান। নিজ পীর সাহেব-- যাঁকে তিনি আজীবন 'বাবাজান' ডেকেছেন, তাঁকে বেয়াই বানিয়ে একই চাদরে বসবেন -- এ যেন অকল্পনীয়! তাই আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করলেন,"হে খোদা! আমাকে বাঁচাও; মুর্শিদকে বেয়াই যেনে আমি যেন দোজখী না হই"। তাঁর আবেদন বৃথা যায় নাই।
শুভ-করার অনুষ্ঠানের চার দিন পূর্বে তিনি ইন্তেকাল করেন। শোক প্রশমনের জন্য দরবারের পক্ষ হতে এক সপ্তাহ পরে নিশান-পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের তারিখ ধার্য হয়, চৌদ্দ মাঘ; তেরশ' বাষট্টি বাংলা।
আটাশ জানুয়ারী; উনিশশ' পঞ্চান্ন সাল, মঙ্গলবার।
বিয়ের দিন বিকাল ২টায় চারখানা মোটর গাড়িতে করে বরযাত্রী রওয়ানা হয়। চল্লিশটি হ্যাজাক(পাম্প লাইট) বাতি জ্বালিয়ে ব্যান্ড বাজিয়ে দশদিক মুখরিত করে যেন কোন রাজা নৈশ উৎসবে চলেছেন। বরসহ ব্যান্ডের তালে রস-ঘন আলাপনে বরযাত্রী এগিয়ে চলে।
বাড়ির নিস্তব্ধতায় ব্যান্ডের শব্দে রাস্তার দু'পার্শ্বে অসংখ্য কৌতূহলী জনতা দাঁড়িয়ে স্বাগত জানায়। রাত বারোটার পূর্বে আকদ্ সম্পন্ন হয়। সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়।
আনন্দঘন পরিবেশে রাত কাটিয়ে সকালে নাস্তা সেরে নববধূ নিয়ে বরযাত্রী দল বাড়ি মুখে রওয়ানা হয়। বিয়ের সাজসজ্জাসহ তিনি রওজা শরীফ পুকুরের উত্তর দিকে লবন গুদামে গিয়ে ঢুকেন। কোথায় বর-বধূর প্রথম দর্শন শাহ্ নজর। কোথায় সে শিহরিত পরশ! কুসুমিত মন, সুরভিত আনন্দের ভীরু কম্পিত হস্তে বিদ্যুৎ চমকাতো, সে চোখে অজান্তেই নামে শ্রাবণের ধারা নববধূ তবু ভাবে, যেখানে যত দূরেই থাকুক, আমি যে তার চরণ সেবাই উৎসর্গ।
বিয়ের এগারোদিন পর নববধূকে বাপের বাড়িতে ফিরতি নাইওর নিতে আসেন বধূর ভগ্নিপতি জনাব বদিউল আলম চৌধুরী। বর বলেন, আজ নয় কাল যাবেন আজ ভাল হবে না। তবু পীড়াপীড়ি করতে শ্বশুর অনুমতি দেন।
গাড়িতে চড়ে মাইজভাণ্ডার শরীফের অল্প পশ্চিমে লোহার খালের পুলে উঠতেই জীপের দু' চাকা রাস্তায় এবং সামনের চাকা গুলো বাইরে পড়তে যাচ্ছিল। চালক কষে ব্রেক ধরে, কিন্তু অনেকটা হুঁশহারা। লোকজন দৌড়ে এসে বড় বাঁশের ঠেস দিলে গাড়ি পেছনে চলে রাস্তায় উঠে আসে। বিপদ কেটে যায়। সেখান থেকে গাড়ি দরবার শরীফ ফিরে আসে। সেদিন আর যাওয়া হল না। পরদিন অনুমতি পেয়ে যেতে পারেন।