Event

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উদযাপন ও ৫ম নগর সম্মেলন

Advertisement

জুলাই গণহত্যার বিচার, ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা নগর শাখার ৫ম নগর সম্মেলন।
সময়: ২১ জুলাই ২০২৫ (সোমবার), বেলা ১১ টা
স্থান: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা

উদ্বোধক:
শামসি আরা জামান
শহীদ তাহির জামান প্রিয়'র মা

আলোচক:
নূরুল কবীর
সম্পাদক,
দ্য নিউ এজ

জয়দীপ ভট্টাচার্য
সমন্বয়ক,
বাসদ (মার্কসবাদী), ঢাকা নগর শাখা

সালমান সিদ্দিকী
সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট

নওশিন মুশতারী সাথী
আহ্বায়ক, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি

সভাপতি:
অরূপ দাস শ্যাম
সভাপতি,
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা নগর শাখা

শিক্ষার্থী বন্ধুগণ,
শুভেচ্ছা নেবেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা নগর শাখার ৫ম সম্মেলন আগামী ২১ জুলাই, ২০২৫ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে। দীর্ঘদিনের শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল গোটা দেশ। সেদিন লক্ষ-কোটি কিশোর-তরুণ প্রায় নিরস্ত্র অবস্থায় যুদ্ধ করেছে ফ্যাসিস্ট শাসকের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে। এ লড়াইয়ে সহস্রাধিক অমূল্য প্রাণ শহীদী আত্মদান করেছে এবং হাজার হাজার মানুষ চোখ হারিয়েছে, হাত-পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। গণঅভ্যুত্থানে আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র এবং শিক্ষা ব্যবস্থার। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম-সরকার গণ আকাঙ্ক্ষার দিকে না তাকিয়ে আমলাতন্ত্র, কর্পোরেট পুঁজি এবং সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখতে গিয়ে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিচ্ছে। সরকার শেখ হাসিনাসহ জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের বিচার, আহতদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
ঢাকায় অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই বেসরকারি। শাসকশ্রেণির চক্রান্ত এবং মুনাফার স্বার্থে শিক্ষা আজ অধিকারের পরিবর্তে ব্যবসার লাভজনক পণ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার সর্বস্তরেই চলছে বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ। ফলে সাধারণ মানুষের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার অধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিণত করা হয়েছে কোচিং ও গাইড নির্ভর প্রতিষ্ঠানে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল স্কুল-কলেজকে শিক্ষার মূল কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে। গণআকাঙ্ক্ষার চাপে সরকার কিছু সংস্কার কমিশন করলেও শিক্ষা সংস্কার কমিশন করেনি। আমরা অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাই, সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু শিক্ষা সম্পর্কে শাসকশ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গী থাকে অভিন্ন। তা হলো- শিক্ষাকে কীভাবে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়া যায়। বিগত আওয়ামী সরকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং ছাত্র সংগঠনসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণের মতামত উপেক্ষা করে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১ চালু করেছিলো। জ্ঞান-বিজ্ঞান-মনুষ্যত্ব ধ্বংসের এই শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে আমাদের সংগঠন সারাদেশে আন্দোলন গড়ে তোলে। দেশের মানুষের আন্দোলনের মুখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটি বাতিল করে।

সংগ্রামী শিক্ষার্থী বন্ধুগণ,
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলো তীব্র ক্লাস রুম, শিক্ষক, আবাসন এবং পরিবহন সংকটে জর্জরিত। একাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকায় নিয়মিত ক্লাস হয় না। লাইব্রেরি, সেমিনারে নেই পর্যাপ্ত বই। ল্যাবগুলোতে নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও সঠিক সময়ে ফলপ্রকাশ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। এরকম নানামুখী সংকট শিক্ষার্থীদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক এবং প্রশাসনিক সংকটে জর্জরিত হয়ে আন্দোলন করতে থাকে। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অধিভুক্তি বাতিল করে 'ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়' নামে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয়নি। একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং অবকাঠামোসহ সার্বিক বিষয় কেমন হবে তা পরিষ্কার করা হয়নি। বন্ধ রয়েছে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। বাস্তবে পুরো বিষয়টা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধোঁয়াশা এবং বিভ্রান্তির মধ্যে রাখা হয়েছে।
দেশে সরকারি উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শাসকগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে অকার্যকর রেখে শিক্ষার্থীদের ধাবিত করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। তাই অস্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে ভর্তি হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানে। নির্দিষ্ট কোন টিউশন ফি নীতিমালা না থাকায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ইচ্ছামতো টিউশন ফি নির্ধারণ করছে। আইনগতভাবে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হয় ব্যবসায়িক স্বার্থে। আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অভিন্ন টিউশন ফি নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার আলোচনা অত্যন্ত জরুরি ছিল কিন্তু তা হয়নি। বিগত আওয়ামী সরকারের চাপানো ১৫ শতাংশ করের বোঝা এই সরকার আন্দোলনের মুখে ১০ শতাংশ করছে কিন্তু সম্পূর্ণ বাতিল করেনি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শিক্ষাঙ্গনগুলোতে সন্ত্রাস দখলদারিত্বের বিপরীতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু হবে- এটাই প্রত্যাশিত ছিল। অথচ আমরা দেখলাম প্রশাসন ইডেন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি ও মিছিল-সমাবেশ বন্ধের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে-যা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী। গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে এবং ছাত্র রাজনীতি বন্ধের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ঢাকা শহর শিক্ষার্থীদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নেই পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, লাইব্রেরি ও সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ। মাদক এবং পর্নোগ্রাফি তরুণ-যুবকদের নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নারীবিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা, ট্যাগিং কালচার, মব সন্ত্রাস এবং আদিবাসী-সংখ্যালঘু জনগণের ওপর নির্যাতন বাড়লেও- এসব প্রতিরোধে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, শিক্ষা-সংস্কৃতি-মনুষ্যত্ব রক্ষার লড়াই গড়ে তুলতে চায়। আমরা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের মানুষের আকাঙক্ষা পূরণের লড়াইয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। সূর্যসেন, প্রীতিলতা, রোকেয়া, রুমী, আবু সাঈদদের মত মানুষরা আমাদের এ লড়াইয়ের প্রেরণা। এই সম্মেলন থেকে ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান- জুলাই গণহত্যার বিচার, ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলুন!

দাবিসমূহ:
১. শেখ হাসিনাসহ জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের বিচার কর এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত কর।
২. সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অবিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাও। ছাত্র রাজনীতি এবং মিছিল-সমাবেশ বন্ধের অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত বাতিল কর।
৩. অবিলম্বে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ করে সকল অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রদান কর। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নাও।
৪. কোচিং-গাইড বাণিজ্য বন্ধ কর, শিক্ষা ব্যয় কমাও, স্কুল-কলেজকে শিক্ষার মূলকেন্দ্রে পরিণত কর। শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সামাজিক মর্যাদা ও বেতন ভাতা নিশ্চিত কর।
৫. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ১০ শতাংশ কর আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার কর। আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় অভিন্ন টিউশন ফি নীতিমালা প্রণয়ন কর, ট্রাই সেমিস্টার পদ্ধতি বাতিল করে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু কর। স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দাও।
৬. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পরিবহন নিশ্চিত ও শিক্ষার্থীদের জন্য মেট্রোরেলসহ গণপরিবহনে হাফ পাশ নিশ্চিত কর।
৭. মাদকদ্রব্যের বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নাও, পর্ন সাইট বন্ধ কর। সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন বিকাশে সামাজিক-সাংস্কৃতিক আয়োজন বৃদ্ধি কর। পর্যাপ্ত খেলার মাঠের ব্যবস্থা কর।



Advertisement
Share with someone you care for!

Best of Dhaka Events in Your Inbox